জাপানি কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায় এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহ বেড়েছে জাপানি কোম্পানিগুলোর। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এখন আরও বেশি হারে জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। ওই দেশের কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে ২০টি দেশকে তালিকার শীর্ষে রেখেছে, তার মধ্যে প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
জাপান সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থা জাপান এক্সটারনাল ট্রেডের (জেট্রো) এক জরিপে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আগ্রহের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত মার্চে জেট্রো ২ হাজার ৯৯৫টি কোম্পানির ওপর ‘জাপানি কোম্পানির আন্তর্জাতিক কার্যক্রম’ শীর্ষক এই জরিপ করে। জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফলে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর গুলশানে জঙ্গি হামলায় সাতজন জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়েনি।
জেট্রোর জরিপে জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন করা হয়, কারা বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী? জবাবে ৯৯২টি কোম্পানি বলেছে, তাদের বিদেশে ব্যবসা আছে এবং তারা সম্প্রসারণে আগ্রহী। সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জাপানি কোম্পানিগুলোর পছন্দের শীর্ষ দেশ চীন। ৫২ শতাংশ জাপানি কোম্পানি চীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। এর পরের অবস্থানে আছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান।
জাপানিদের পছন্দের শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় ভারত আছে ৮ নম্বরে, মালয়েশিয়া ১১ নম্বরে, মিয়ানমার ১৪ নম্বরে, কম্বোডিয়া ১৭ নম্বরে এবং বাংলাদেশ আছে ২০ নম্বরে। তবে এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা নেই।
জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাড়ে ১৮ শতাংশ বলেছে, তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে ভারতকে পছন্দ করছে। ১২ দশমিক ৭ শতাংশ পছন্দ করেছে মিয়ানমারকে। বাংলাদেশকে পছন্দ করেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কোম্পানি। এই হিসাব ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য। এর আগের দুই অর্থবছরে ২ দশমিক ৬ শতাংশ করে কোম্পানি বাংলাদেশকে পছন্দ করেছিল।
জেট্রোর জরিপে একটি দেশকে কিসের ভিত্তিতে পছন্দ করা হচ্ছে, তাঁর মোটা দাগে পাঁচটি বিষয় ছিল। এর মধ্যে সাধারণ পণ্য উৎপাদনের জন্য ভালো এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৬ নম্বরে, উচ্চমূল্য সংযোজনের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৮ নম্বরে, গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ১৮ নম্বরে, লজিস্টিকস বা পণ্য পরিবহন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০ নম্বরে আছে। দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় নেই। একটি হলো পণ্য বিক্রি, অন্যটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রম।
চীন ও জাপান থেকে কারখানা সরিয়ে জাপানের কোম্পানিগুলো কোন দেশে যেতে চায়, তার একটি প্রবণতাও উল্লেখ করা হয়েছে জেট্রোর প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, চীন ও জাপান ছেড়ে জাপানি কোম্পানিগুলো ১৩টি দেশ ও পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। ওই ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা এবং জাপানকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরাও বলছেন, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে চায়।
গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর জাপানি নাগরিকেরা বাংলাদেশে আসছিলেন না। এ নিয়ে আলোচনার জন্য গত নভেম্বরে অর্থসচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল জাপানে যায়। সেই দলে ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী সদস্য এম এমদাদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলশানের ঘটনার কারণে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা কেটেছে। আমরা এখন দেশেই জাপানি পরামর্শকদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান। তাদের প্রকল্পগুলো বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে চলছে।
উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১ হাজার ১০ একর জমিতে জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য গত ২ মে সুমিতমো করপোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়। সম্প্রতি আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের সঙ্গে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশনের বড় বিনিয়োগ চুক্তি হয়। জুনে জাপান বাংলাদেশকে ১৫৯ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার চুক্তি করেছে।
জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) জেনারেল সেক্রেটারি তারেক রাফি ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ আগের চেয়ে বেশি দেখতে পাচ্ছি। এর দুটি কারণ। প্রথমত, বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ায় বাজার বড় হচ্ছে। এতে জাপানি কোম্পানিগুলোর পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পণ্য উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় জাপানিরা বাংলাদেশকে উৎস দেশ হিসেবে দেখতে চাইছে।’

About Admin MC3
This is dummy text. It is not meant to be read. Accordingly, it is difficult to figure out when to end it. But then, this is dummy text. It is not meant to be read. Period.